Posts

Showing posts from October, 2020

দক্ষিনেশ্বর - পুণ্যধামের অলিন্দে থাকা অজানা ইতিহাস। লিখেছেন - সঞ্চারী ভট্টাচার্য্য

Image
১৮৫৫ সালের ৩১শে মে দক্ষিণেশ্বর কালী মন্দির প্রতিষ্ঠা করেন লোকমাতা রানি রাসমণি। একটা স্বপ্ন। আর সেই স্বপ্নকে সত্যি করার ইচ্ছে। এবং অবশেষে তার সফল বাস্তবায়ন। সহজে বললে এভাবেই গড়ে উঠেছিল দক্ষিণেশ্বর কালীবাড়ি। সে গল্পও কম আকর্ষণীয় নয়। ১৮৪৭-তে শুরু হয় মন্দির নির্মাণ। এবং তা শেষ হয় ১৮৫৫ সালে। ১০০ ফুটেরও বেশি উঁচু এই নবরত্ন মন্দিরের স্থাপত্য সত্যিই নয়নাভিরাম।সেই সময়ে এই মন্দির তৈরি করতে লেগেছিল ন’লক্ষ টাকা! যা সেই সময়ের নিরিখে বিরাট অর্থ। জমিদার বাড়ির বিধবা পত্নী রাসমণি, যাঁর উপরেই সেই সময়ে ছিল জমিদারি দেখাশোনার দায়িত্ব, তিনি সেই বিপুল অর্থ খরচ করে গড়ে তুলেছিলেন মন্দিরটি। এই মন্দিরের গর্ভগৃহে সহস্র পাপড়ির রৌপ্য-পদ্মের উপরে শুয়ে থাকা শিবের বুকে দেখা যায় মা ভবতারিণী কালীকে। পাথর কুঁদে তৈরি করা হয়েছিল মূর্তিটি।দক্ষিণেশ্বর মন্দিরের সঙ্গে অবশ্যম্ভাবী ভাবে যাঁর নাম জড়িয়ে রয়েছে তিনি রামকৃষ্ণ পরমহংসদেব । ১৮৫৫ সালে দাদা রামকুমারের সহযোগীরূপে এখানে আসেন। পরে রামকুমারের মৃত্যুর সময় তিনি দাদার স্থলাভিষিক্ত হন। ১৮৮৬ পর্যন্ত প্রায় তিন দশক শ্রীরামকৃষ্ণ এই মন্দিরে ছিলেন। ক্রমশ ছড়িয়ে

অবিভক্ত বঙ্গদেশে বিদ্যাসাগরের পূর্ববর্তী ও পরবর্তী যুগে নারীশিক্ষার বিস্তার ও উন্নয়ন । লিখছেন - সুনন্দীতা দেবনাথ

Image
   আজ এই একুশ শতকে দাঁড়িয়ে বিদ্যাসাগরের মতন একজন মানুষকে ঠিকঠাক ভাবে অনুধাবন করতে গেলে উনিশ শতকের প্রথমার্ধকে—যা বাঙালির কাছে এক জটিল ঘূর্ণাবর্তের কাল; নানামুখী চিন্তাভাবনার দ্বন্দ্ব সংঘাত—সেই সময়টিকে ভালো করে বুঝতে হবে। বুঝতে হবে দুটি কারণে। প্রথমত, এই সময় বাঙালী জীবনে এসে লেগেছে নবজাগরণের ঢেউ, যদিও তা মূলত কলকাতা কেন্দ্রিক। দ্বিতীয়ত, পড়াশোনা সূত্রেই বিদ্যাসাগর কলকাতায় এবং তাঁর মানসিক গঠনটি তৈরি হচ্ছে এই প্রেক্ষাপটেই। সময়ের পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে সামাজিক পরিবর্তন ঘটতে থাকল এবং তার প্রভাব দেখা যেতে থাকল নারী শিক্ষার ক্ষেত্রেও। মনুর যুগ থেকে নারীর সামাজিক মর্যাদা কমে যেতে লাগল এবং নারী শিক্ষার অবনতি হতে লাগল।এই সময় সামাজিক শৃঙ্খলা ও বিধি-নিষেধ কঠোরভাবে প্রয়োগ হতে শুরু করে এবং সমাজ ক্রমশ আচার সর্বস্বতার দিকে অগ্রসর হতে শুরু করে। মনুর বিধানে মেয়েদের বিবাহকে বৈদিক পাঠের সমতুল্য,স্বামী সেবাকে আশ্রমিক জীবনের সমান এবং গৃহকর্মকে সন্ধ্যা প্রার্থনার সমতুল্য হিসাবে গণ্য করার নির্দেশ দিয়ে মেয়েদের সামাজিক স্বাধীনতা ও শিক্ষালাভের মূলে কুঠারাঘাত করেছিলেন। তিনি ভারতীয় মেয়েদের পরাধীন অন্

কালীক্ষেত্র কালীঘাট। কলমে - সঞ্চারী ভট্টাচাৰ্য্য

Image
   পশ্চিমবঙ্গের সবচেয়ে জনপ্রিয় সতীপীঠ কালীঘাট |অথচ প্রাচীন কোন তন্ত্রগন্থে এর নাম নেই |সতীপীঠ কালীঘাটের প্রথম উল্লেখ পাওয়া যায় তন্ত্রচূড়ামণি গ্রন্থে |পীঠ নির্ণয় তন্ত্রের উনবিংশ পীঠ হল কালীঘাট -  "নকলীশ কালী পীঠে দক্ষ পদাঙ্গুলি চমে,  সর্বসিদ্ধিকারী দেবী কালিকা পত্র দেবতা"| অর্থাৎ কালীঘাটে সতীর দক্ষিণ পায়ের বৃদ্ধাঙ্গুষ্ঠ ব্যতীত চারটি আঙুল পড়েছে, দেবী এখানে কালিকা, ভৈরব নকুলেশ |তবে পীঠমালা তন্ত্রমতে এখানে সতীর বামহস্তের অঙ্গুলি পতনের কথা উল্লেখ আছে -  "সতী দেব্যা শরীরত: বামভূজাঙ্গুলি পাতো জাতো ভাগীরথী ওঠে"| নিগমকল্পের পীঠমালায় গঙ্গা তটের ধনুকাকৃতি স্থানকে কালীঘাট বলা হয়| এই গ্রন্থে কালীঘাটকে কাশীর ন্যায় পূণ্যভূমি রূপে নির্দেশ করা হয়েছে|বৃহন্নীল  তন্ত্রেও কালীঘাটকে মহাপীঠের আখ্যা দেওয়া হয়েছে| ভারতের সাতজন সিদ্ধ যোগীর একজন লোকনাথ ব্রহ্মচারীর প্রথম সাধনা ক্ষেত্র ছিল কালীঘাট| তখন দেবী পর্ণকুটিরে পূজিতা হতেন| আত্মারাম ব্রহ্মচারী ও ব্রহ্মানন্দগিরি মহারাজ দেবীর স্বপ্নাদেশ মত ব্রহ্ম শিলাতে চোখমুখ অঙ্কন করে কালীঘাটেই প্রতিষ্ঠা করেন| দেবী অঙ্গ ব্রহ্ম শিলার নিচের কুঠুরিতে রক

বাঙালির নাট্যচর্চা ও রঙ্গমঞ্চ । কলমে - সুতপা দত্ত

Image
  বাঙালির নাট্যচর্চা ও রঙ্গমঞ্চ বাঙালি সর্বতোভাবে সংস্কৃতি মনষ্ক এবং সাহিত্যানুরাগী চারুকলা প্রিয় বিদগ্ধ জাতি। যা কিছু সৃষ্টিশীল তাই বাঙালির চিত্ত বিনোদন করে এসেছে। সে সাহিত্যচর্চাই হোক বা সঙ্গীত চর্চাই হোক বা না ট্য চর্চাই হোক। বাঙালির নাট্যচর্চা যখন শুরু হয় তখন নগর কলকাতার বয়েস সবে একশো বছর। সবেমাত্র নগরায়নের সূচনা হচ্ছে।তখনো কলকাতা জুড়ে জঙ্গল, ধানখেত, মেঠোপথ। চওড়া রাস্তা হয়তো তখনো কল্পনাতেই আছে।বিদ্যুতের আলো আসেনি,সংবাদ পত্র আসেনি।যান বাহন বলতে তখনো পালকি।যদিও কলকাতা শহর প্রতিষ্ঠার পঞ্চাশ-ষাট বছরের মধ্যেই ইংরেজরা তাদের বিনোদনের জন্য তৈরি করেছিল ‘চৌরঙ্গী থিয়েটার’। কিন্তু তখন পর্যন্ত বাংলা ভাষায় নাটক লেখা বা অভিনয় নিয়ে ভাবনা চিন্তা করেননি কেউই।কারণ নাটক লেখার উপযুক্ত বাংলা গদ্যের তখনো জন্ম হয়নি।   এই ভাবনা চিন্তা প্রথম করেছিলেন একজন বিদেশী-গেরোসিম স্তেফানোভিচ লেবেডফ। তিনিই সূচনা করেছিলেন বাংলা ভাষায় প্রথম নাট্যাভিনয়।   লেবেডফকেই বলা যায় বাংলা থিয়েটারের প্রতিষ্ঠাতা,অনুবাদক, নাট্যপ্রযোজক। রাশিয়ার ইউক্রেনের এক কৃষিজীবী পরিবারে তার জন্ম। তিনি তার মাতৃভাষা রুশ ছাড়াও নিজের একান্ত ব্যাক