Posts

Showing posts from September, 2020

পুরনো কেল্লার পুরনো গল্প - অথ ফোর্ট উইলিয়াম কথা [দশম পর্ব] । প্রজ্ঞা পারমিতা

Image
  “Mythical history of the British Empire in the East begins in a black hole”  অধ্যাপক পার্থ চ্যাটার্জি এহেন মন্তব্য দিয়ে শুরু করেছেন তাঁর বই “The Black hole of the Empire – History of a global practice of power”. এটি একটি ঐতিহাসিক সত্য যে পলাশীর যুদ্ধ দিয়েই ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের ভিত্তি প্রস্তর স্থাপিত হয়। ক্লাইভ যত বড় রাজনীতি বোদ্ধাই হোক না কেন, সেই সময়ের প্রেক্ষাপটে ধ্বস্ত বাণিজ্য সামলে নেওয়ার প্রয়োজনে ‘কিং মেকারে’র ভূমিকায় অবতীর্ণ হওয়াই চরম লক্ষ্য ছিল, শাসন যন্ত্র হাতে তুলে নেওয়ার প্রশ্নই আসে না। যখন সময়ের ব্যবধানে সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠার ইতিহাস লেখার সময় এলো তখনই এই যুদ্ধের ভূমিকা সম্যক ভাবে অনুভব করে তারা। কিন্তু একটি আগাপাশতলা অনৈতিক যুদ্ধ দিয়ে মহান ব্রিটিশ সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠার সূচনা হয় একথা লিখতে তাদের প্রবল অস্বস্তি হত। ব্রিটিশ চেতনা থেকে এই কণ্টক সরাতে তাই একটি অন্যায়ের প্রতিশোধের তত্ত্ব খাড়া করা হয়। একটি বিস্মৃত ঘটনার পুনর্নির্মাণ করে হয় যার অনেকটাই আরোপিত। সেই ঘটনাটি হল ‘অন্ধকূপ হত্যা’। এই কাজটি সুচতুর ভাবে শুরু করেন থমাস মেকলে ১৮৪০ সালে লেখা একটি প্রবন্ধে যেখানে তিনি অন্ধকূপ হত্

পুরনো কেল্লার পুরনো গল্প - অথ ফোর্ট উইলিয়াম কথা [নবম পর্ব] লিখেছেন - প্রজ্ঞা পারমিতা

Image
  “ এই পৃথিবীর রণ রক্ত সফলতা সত্য; তবু শেষ সত্য নয়। কলকাতা একদিন … ”   ১৭৫৬ সালের ১৬ ডিসেম্বর তারিখে চন্দননগরের ফ্রেঞ্চ কাউন্সিল একটি চিঠি পাঠায় তাদের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে যা বক্তব্য অনুবাদ করছি… “সদ্য ঘটে যাওয়া যে ঘটনাবলীর মধ্যে দিয়ে ইংরেজরা বাংলায় তাদের সবক’টি সেটলমেন্ট থেকে বিতাড়িত হল আমাদের ধারণা আপনারা আশ্চর্য হয়ে যাবেন একথা জানলে। আমরা সংক্ষেপে একটা বিবরণ দেওয়ার চেষ্টা করছি। বাংলার নতুন নবাব সিরাজউদ্দৌল্লা তার মাতামহ আলীবর্দি খাঁর মৃত্যুর পর এই বছর এপ্রিল মাসেই বাংলার ‘সুবা’ হাতে পেয়েছে, যদিও তার নবাব হওয়াটা বহুসংখ্যক লোককেই অবাক করেছিল। গদিতে বসতে না বসতেই ইংলিশরা এই উগ্র স্বভাবের যুবককে অকারণ চটিয়েছে তার এক শত্রুকে আশ্রয় দিয়ে এবং চরম ঔদ্ধত্য দেখিয়েছে যার ভয়ানক মূল্য এইভাবে দিতে হল তাদের।…।” ইংরেজের রাজনৈতিক হার ফরাসিদের কাছে চিরকাল উপভোগ্য ছিল কিনা জানি না, তবে কয়েকটি ঐতিহাসিক সত্য এমন কিছু তথ্যই দেয়। এমনকি ইংরেজের জয়ের বর্ণনাতেও তারা বিজিতের পক্ষ নিয়েছে এমন প্রমাণ পেয়েছি। টিপু সুলতানকে পরাস্ত ও নিহত করার ঘটনা নিয়ে প্যারিসে অপেরা তৈরি হয়েছিল এবং টিপুর সহমর্মি

পুরানো কেল্লার পুরনো গল্প - অথ ফোর্ট উইলিয়াম কথা (অষ্টম পর্ব) । লিখছেন - প্রজ্ঞা পারমিতা

Image
 ফোর্ট উইলিয়ামের বয়স গড়িয়ে গড়িয়ে পঞ্চাশ ছুঁতে চলল। পঞ্চম দশকের শেষের দিকে লিখিত কিছু নথিপত্র, যেমন ফোর্ট উইলিয়াম ও কোম্পানির সদর দপ্তরের মধ্যে আদান-প্রদান হওয়া চিঠি এবং কেল্লার কনসাল্টেশন নোর্টস ইত্যাদির দিকে নজর দেওয়া যাক একবার। এসবের অবতারণা করার কারণ তাতে বাংলার রাজনৈতিক পটভূমিতে ঘটা নানা ঘটনার প্রতিফলন পাওয়া যায়। বলাই বাহুল্য, বাংলার শাসনতন্ত্রের সঙ্গে ফোর্ট উইলিয়ামের সমীকরণ অত্যন্ত গুরুত্বপুর্ণ বিষয় এবং এই অঙ্কটি ভুল কষার ফলেই পুরনো কেল্লা ধ্বংস হয়।       লন্ডনের লিডেন হল স্ট্রিট থেকে ১৭৪১ সালের জুলাই মাসে লেখা চিঠি পায় ফোর্ট উইলিয়াম, নিম্ন লিখিত বয়ানে... "We are pleased that no bad consequences ensued to us on the Nabob being slain in battle, however as affairs in the Mogul Empire are in a very precarious situation, we would have our several settlements be put and kept in best posture of Defence, ... "       চিঠির এই 'ব্যাটেল' হল গিরিয়ার যুদ্ধ যে সংক্ষিপ্ত কিন্তু তীব্র যুদ্ধ বাংলার ইতিহাসে উল্লেখযোগ্য পটপরিবর্তন ঘটায়। বিহারের নায়েব নাজিম আলীবর্দি খাঁ নবাব সরফরাজ

পুরনো কেল্লার পুরনো গল্প - অথ ফোর্ট উইলিয়াম কথা [সপ্তম পর্ব]

Image
  পুরনো কেল্লা প্রতিষ্ঠিত হওয়া থেকে ধূলিসাৎ হওয়া পর্যন্ত কাল সীমার মধ্যে ছোট বড় কয়েকটি প্রাকৃতিক দুর্যোগের মুখে পড়ে। এর মধ্যে একটি ছিল চরমতম বিপর্যয় যার প্রসঙ্গ কলকাতার ইতিহাস প্রেমীদের বারবার মনে পড়ছে সদ্য ঘটা আমফান ঘূর্ণিঝড়ের পর। সময়টা ১৭৩৭। কেল্লা ঘিরে ইতিউতি গজিয়ে উঠেছে ইংরেজ কেষ্টবিষ্টুদের বেশ কিছু সৌধ। তথাকথিত ব্ল্যাক টাউনে পুরাতন এবং নব্য ধনিক সম্প্রদায়ের অট্টালিকার পাশাপাশি গরিবগুরবোদের কুঁড়ে ঘরের সহাবস্থান। এমন সময় বঙ্গোপসাগর থেকে এক ভয়াবহ ঘূর্ণি ঝড় ছুটে এসে সব কিছু তছনছ করে দিয়েছিলো। শ্রীপান্থের ভাষায় “যেন কোন দৈত্য তার বিশাল বাহু দিয়ে শিশু কলকাতার চুলের মুঠি ধরে আছাড় মারলো।” সেই ঝড় ছিল প্রকৃত অর্থে যাকে বলে প্রলয়ঙ্কর ঝড়। সদ্য জন্মানো শহর কলকাতার নাকি প্রায় দুবছর লেগে গেছিল স্বাভাবিক ছন্দে ফিরতে। সেই ঝড়ের খবর নিতে গিয়ে দেখা গেলো পুরনো কলকাতার তথ্যের আকর যে ফোর্ট উইলিয়ামের কনসাল্টেশন বুক সেখানে মাত্র দুটি বাক্য খরচ করা হয়েছে তার সম্পর্কে, যার মধ্যে একটি বাক্য আবার বালাসোর সম্পর্কিত! তারা লিখছে - “On the 30th September there was a great storm which drove several ships ashore.Th

পুরনো কেল্লার পুরনো গল্প - অথ ফোর্ট উইলিয়াম কথা [ষষ্ঠ পর্ব]

Image
"সেদিন এ বঙ্গপ্রান্তে পণ্যবিপণীর এক ধারে নিঃশব্দচরণ আনিল বণিকলক্ষ্মী সুরঙ্গপথের অন্ধকারে রাজসিংহাসন। বঙ্গ তারে আপনার গঙ্গোদকে অভিষিক্ত করি নিল চুপে চুপে-- বণিকের মানদণ্ড দেখা দিল পোহালে শর্বরী রাজদণ্ডরূপে।" শিবাজি উৎসব - রবীন্দ্রনাথ শর্বরী তো আর এক প্রহরে কাটে নি। সেই রাতের প্রহরে প্রহরে বণিকদল এক একটি পদক্ষেপে বিন্দু চিহ্ন এঁকে এঁকে এগিয়েছে যা যোগ করলে মানদণ্ড থেকে রাজদণ্ডের পথরেখাটি স্পষ্ট হয়ে উঠবে। ধরুন রাত্রি যখন মধ্যযাম, কোম্পানি তখন বিশেষ সনদ বলে ভারতীয় রাজত্বে বসালো ইংরেজ আদালত। অর্থাৎ তারা ন্যায়দণ্ডের দিকে হাত বাড়ালো। এই দুঃসাহসের কারণ অবশ্যই এই যে তখন “মোগল মহিমা রচিছে শ্মশানশয্যা”। ১৬০০ সালে রানী প্রথম এলিজাবেথের কাছ থেকে শুধু বাণিজ্য করার অধিকার পেয়েছিল যারা, তারা ১৬৮৬ সালে তাদের সেটলমেন্টের মধ্যে বিভিন্ন অপরাধের বিচার ও মীমাংসার প্রয়োজনে আদালত বসানোর অনুমতি পায়। অর্থাৎ কোম্পানির কর্মচারী, নাবিক ইত্যাদিদের জন্য ছিল এ ব্যবস্থা, স্থানীয় অধিবাসীরা ছিল তার আওতার বাইরে। রাজা প্রথম জর্জ ১৭২৬ সালে বিশেষ চার্টার আনলেন কোম্পানির স্বপক্ষে যাতে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানিকে তাদের স

পুরনো কেল্লার পুরনো গল্প - অথ ফোর্ট উইলিয়াম কথা [পঞ্চম পর্ব]

Image
"তবু হঠাৎ আসে যখন পাতা ঝরার দিন দমকা হাওয়া থেকে থেকে ছাদ ছাড়ানো গাছের মাথায় লাগে আমার শহর খানিক বুঝি ঝিমিয়ে পড়া তন্দ্রা থেকে জাগে।" -প্রেমেন্দ্র মিত্র বিরল জনবসতির তিনখানি গ্রাম - কলকাতা, সুতানুটি ও গোবিন্দপুর! কোথাও ঘন জঙ্গল, কোথাও ঝোপঝাড়। সাপ খোপ এবং বাঘমামাদের উপস্থিতির ইতিহাসও আছে। হবে নাই বা কেন? এযে দক্ষিণ রায়ের এলাকা ছিল অদূরেই  চিৎপুরে চিত্তেশ্বরী মন্দিরে দেবীমূর্তির পদপ্রান্তে প্রতিষ্ঠিত বাঘটি তার ইঙ্গিত দেয়। ইতিহাস এমন এক জায়গাকে তার বাঁক বদলের জন্য বেছে নিলো। খেলার ভাষায় যাকে বলে টার্নিং পয়েন্ট। মঙ্গলকাব্যের কলিকাতা, আইন-ই-আকবরির খাসমহল কলকাতা বদলে যেতে লাগলো কোম্পানির ক্যালকাটায়। সেই সব পরিবর্তনের ভরকেন্দ্র ছিল পুরনো কেল্লা। কলকাতা প্রেসিডেন্সি ঘোষিত হলে সিদ্ধান্ত নেয়া হয় তার সর্বময় কর্তা হবেন প্রেসিডেন্ট যাকে সাহায্য করবেন চার সদস্য বিশিষ্ট কাউন্সিল। প্রথম সদস্য অ্যাকাউণ্টেন্ট বা হিসাবরক্ষক, দ্বিতীয় ওয়্যারহাউস কিপার বা মালগুদাম রক্ষক, তৃতীয় মেরিন পার্সার বা নৌ বিভাগের হিসাব রক্ষক এবং চতুর্থ হলেন রিসিভার অফ ক্যালকাটা রেভিন্যু অর্থাৎ কলকাতার খাজনা আদায়কারী। এই কাউন

পুরনো কেল্লার পুরনো গল্প - অথ ফোর্ট উইলিয়াম কথা [চতুর্থ পর্ব]

Image
"পোল বেঁধেছে কল ফেঁদেছে বসিয়ে বাজার হাট রাস্তা পেতে মেলেছে ঢের রং-বেরং-এর ঠাট; তবু যেন জংলা আদিম জলা জুড়ে আছে আজো বুকের তলা।" -প্রেমেন্দ্র মিত্র পশ্চিমে ভাগীরথী আর পূর্বে বিস্তৃত লবণ হ্রদ। আরও আছে খালের কাটাকুটি, পশ্চিম থেকে পূবে। সব মিলিয়ে জলা জংলা এলাকা। ক্যাপ্টেন হ্যামিলটনের বর্ণনায়, “This overflows in September and October, and then prodigious numbers of fish resort thither; but in November and December when the floods are dissipated those fishes are left dry, with their putrefaction so affect the air with thick stinking vapours which the north-east wind bring with them to Fort William that they cause yearly mortality. One year I was there, and there were reckoned in August about twelve hundred English, and before the beginning of January there were 460 burials registered in the clerk’s book of mortality.” পচা মাছের গন্ধেই সাহেবরা পটাপট মারা পড়তো না হয়তো, হয়তো ওই মেছো গন্ধটাই ছিল মৃত্যুগন্ধী। কারণ ওই সময়টা আদতে ছিল হিসেব মেলানোর যে কতজন গেলো আর কতজন রইলো। সেই সময় কলকাতায়