Posts

Showing posts from August, 2020

পুরনো কেল্লার পুরনো গল্প - অথ ফোর্ট উইলিয়াম কথা [তৃতীয় পর্ব]

Image
  "অনেক ধুলোয় মলিন পা  তার অনেক ধোঁয়ায় ঝাপসা দুটি চোখ। আমার শহর ভুলে গেছে তার জীবনের আদি পরম শ্লোক।" - প্রেমেন্দ্র মিত্র পুরনো কেল্লা ছিল কাগুজে কেল্লা, তার না ছিল কোন পরিখা না ছিল সামান্য প্যালিসেডের ঘের। চারদিকের চারটি বুরুজে এবং প্রাকারে কামান বসানো থাকতো বটে, এইটুকুই! কিন্তু সাদামাটা হলেও সে আমলের ছবিগুলি দেখে এটুকু বিশ্বাস করাই যায় যে গঙ্গার তীরে বেশ মনোরম দৃশ্য তৈরি করতো পুরনো কেল্লাটি। কেল্লার প্রাকারগুলি একটি অসমবাহু চতুর্ভুজ তৈরি করেছিল। এর পূর্ব প্রাকার ছিল পশ্চিম প্রাকারের চেয়ে দীর্ঘ আবার দক্ষিণ প্রাকারটিও ছিল উত্তর প্রাকারের চেয়ে লম্বা!  ‘দ্য স্টোরি অফ দ্য ভাইসরয়’স অ্যান্ড গভর্নমেন্ট হাউসেস’ গ্রন্থে লর্ড কার্জন প্রথম কুঠির বর্ণনা দিয়ে লিখেছিলেন, “The Factory building itself was two storeys in height, all the main apartments being upon the upper floor. On entering by the main doorway on the riverside, you turned to the left and ascended by the great staircase to the central hall, from which the principal buildings, lit by very long windows, branched out on either s

পুরনো কেল্লার পুরনো গল্প - অথ ফোর্ট উইলিয়াম কথা [দ্বিতীয় পর্ব]

Image
"আমার শহর নয়কো তেমন বুড়ো;  অতীত কালের অস্থি মুদ্রা চৈত্য বিহার কিছু  পাবে না তার কোথাও মাটি খুঁড়ে।  হঠাৎ কখন নদীর ধারে ব্যপারীদের নায়ে  আমার শহর নেমেছিল কাদামাখা পায়ে… "     --প্রেমেন্দ্র মিত্র   আজকের কলকাতায় যে ফোর্ট উইলিয়াম দাঁড়িয়ে আছে সে তার নামটা উত্তরাধিকার সূত্রে পেয়েছে পূর্বতন ফোর্ট উইলিয়াম থেকে, কিঞ্চিৎ ভিন্ন ভূগোলে যার অস্তিত্ব ছিল প্রায় ষাট বছর। পুরনো কেল্লার সীমা রেখা ছিল উত্তরে ফেয়ারলি প্লেস, পূর্বে নেতাজী সুভাষ রোড, দক্ষিণে কয়লাঘাট স্ট্রিট ও পশ্চিমে গঙ্গা। হ্যাঁ গঙ্গা, কারণ স্ট্র্যাণ্ড রোডের তখন অস্তিত্ব ছিল না; সেখানে তখন গঙ্গা যার জল কেল্লার দেয়ালে ও ঘাটে ছলাৎ ছল ঢেউ তুলতো। কেল্লাঘাট শব্দবন্ধের অপভ্রংশই কয়লাঘাট যা আজও পুরনো কেল্লার স্পর্শাতীত ঐতিহ্য হয়ে রয়ে গেছে। কেল্লার পুর্ব দিকে লালদিঘির অংশটিকে ট্যাঙ্ক স্কোয়ার বলা হত যেখানে সেই ট্যাঙ্কের অবস্থান ছিল এক টুকরো সবুজের মাঝ যাকে ‘Green before the fort’ অথবা ‘The park’ বলে উল্লেখ করা হয়েছে পুরনো লেখাপত্রে। পুরনো কেল্লা পূর্ণাঙ্গ রূপ পেতে প্রায় কুড়ি বছর লেগেছিল। কোম্পানির বিভিন্ন চিঠিতে তার ধীরে ধীরে গড়ে ওঠার

পুরনো কেল্লার পুরনো গল্প - অথ ফোর্ট উইলিয়াম কথা

Image
পুরনো কেল্লার পুরনো গল্প - অথ  ফোর্ট উইলিয়াম  কথা  প্রজ্ঞা পারমিতা শহর কলকাতার একটি গড় আছে। ডিহি কলকাতায়ও একটি গড় ছিল। সেই গড় ঘিরেই আমার শহরের গোড়াপত্তন। মুক্তো সৃষ্টির পদ্ধতিটা মনে করুন। ঝিনুকের বন্ধ খোলের মধ্যে একটি বালি কণা জাতীয় জলবাহিত ‘ফরেন পার্টিকল’ প্রবেশ করলে তাকে ঘিরে পরতের পর পরত তৈরি হতে থাকে এবং শেষে পাই একখানি অনাবিল মুক্তো! ঠিক সেই ভাবেই যেন প্রাচীন গ্রাম 'কলিকাতা' রূপান্তরিত হয় শহর কলকাতায় । এবং অবশ্যই সেই ফরেন পার্টিকল এক্ষেত্রে জোব চার্নক। কোর্টের দোহাই দিয়ে অনেকে রেরে করে উঠতেই পারেন কিন্তু ডিহি কলকাতা থেকে শহর কলকাতা গড়ে ওঠার ইতিহাসের সূচনা বিন্দু যে সুতানুটির স্বল্পালোচিত মোহন টুনি নামক ঘাটে ওই কাল নির্দিষ্ট পুরুষটির নামা এই বিষয়ে সম্ভবত দ্বিমত হওয়ার কোন অবকাশ নেই। অবশ্যই ব্রিটিশ অনুপ্রবেশ না ঘটলেও ভাগীরথীর এই পূব পাড়ে দ্বিতীয় সপ্তগ্রাম গড়ে উঠত। কারণ সরস্বতী মজে গিয়ে সপ্তগ্রামের দিন ফুরিয়েছে তখন। কালের পাখি সেই স্থান ছেড়ে নদীর বাঁকে এই সুতানুটিতে এসে বসেছে ষোড়শ শতকেই। সাতগাঁয়ের বণিককুল শিরোমণি শেঠ বসাকরাও একূলে ভিড় করেছেন । প্রকৃত প্রস্তাবে সেটা

অগ্নিযুগের খেলা – আগস্ট বিপ্লব ও একটি বিদ্যায়তন 

Image
  অগ্নিযুগের খেলা – আগস্ট বিপ্লব ও একটি বিদ্যায়তন  প্রজ্ঞা পারমিতা আজকের যারা চোদ্দ পনেরো ষোল কিংবা আঠেরো বছরের, তারা মেতেছে সব আজব খেলায়! কখনও ব্লু হোয়েল কখনও কিকি বা মোমো – বিচিত্র সব নাম খেলাগুলোর! মিল একটাই, সব খেলাই বিপজ্জনক, সবেতেই আছে জীবন সংশয়। কিন্তু আজ থেকে সাতাত্তর বছর আগে বাংলার এক অখ্যাত গ্রাম কল্যাণচকে একটি সাধারণ স্কুলের ঠিক ওই বয়সী একদল ছাত্র মেতে উঠেছিল এক অন্যরকম বিপজ্জনক খেলায়। সেও ছিল জীবন নিয়ে খেলা, প্রাণ থাকাটাই আশ্চর্যের ছিল তাতে! মা-বাবা-ভাই-বোন সবই তুচ্ছ, জীবন তো আরও সামান্য ব্যাপার! ঠিক যেমন আলোর দিকে গাছের কাণ্ড বেঁকে যায়, অল্পবয়সী ছেলেগুলোর জীবনের অভিমুখ সে খেলার দিকে ঘুরে গিয়েছিলো তেমন ভাবে। সে ছিল দেশ স্বাধীন করার খেলা। ১৯৪২ সালের ৮ই আগস্ট নিখিল ভারত কংগ্রেস কমিটির অধিবেশনে ইংরেজদের দেশছাড়া করতে ‘ভারত ছাড়ো’ প্রস্তাব গৃহীত হয়। স্বাধীনতা সংগ্রামীদের সক্রিয় ভূমিকায় অবিভক্ত মেদিনীপুর জেলা বিশেষত তমলুক মহকুমা ওই সময় বারুদের স্তূপ হয়েছিল। ‘গান্ধীজীর ক্যারেঙ্গে ইয়া মরেঙ্গে’ ডাক তাতে অগ্নিসংযোগ করে।বর্তমান পূর্ব মেদিনীপুরের জেলা সদর তমলুক থেকে সামান্য দূরে কল্যাণচ

'ভিক্টোরিয়া-মেমোরিয়াল' - ভারতের ঔপনিবেশিক শাসনের এক গৌরবজ্জ্বল সৃষ্টি

Image
ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল - ব্রিটিশ  ঔপনিবেশিক শাসনের এক গৌরবজ্জ্বল সৃষ্টি কলমে : সঞ্চারী ভট্টাচার্য্য স্বাধীনোত্তর পূর্ব যুগ পর্যন্ত কলকাতাই ছিলো ব্রিটিশ ভারতের রাজধানী |শিক্ষার প্রসার ও পশ্চিমাকরণের মধ্য দিয়ে বাংলায় 'রেনেসাঁ'র পর্ব শুরু হয়। বহু সামাজিক সংস্কার আন্দোলন পরিচালিত হয়েছিল এই সময় এবং বৌদ্ধিক জনগোষ্ঠী এই পর্ব থেকেই স্বাধীনতার অর্থ বুঝতে শুরু করেন |তখন এই শহরটি ভারতীয় স্বাধীনতা সংগ্রামের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়। সমস্ত উত্তেজনার ফলে ব্রিটিশ ভারতের রাজধানী দিল্লিতে স্থানান্তরিতকরণের সিদ্ধান্ত গৃহীত  হয়। স্থানান্তরিত হওয়ার পরেও কলকাতা বাণিজ্য ও স্বাধীনতা সংগ্রামের একটি প্রধান কেন্দ্রবিন্দু হিসাবে নিজের ভূমিকা বহাল রাখতে সক্ষম হয়েছিল। ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল,কলকাতা  লর্ড ওয়েলেসলি কর্তৃক কলকাতার আর্কিটেকচারাল সাজসজ্জার ক্ষেত্রে আমূল পরিবর্তন সাধিত হয়েছিল |ব্রিটিশ শাসনের প্রধান রূপকার হিসাবে তখন ইংল্যান্ডে রাজশাসন পরিচালনার নেতৃত্বাধীন কর্তৃত্ব ছিলেন মহারানী ভিক্টরিয়া, যিনি 'কুইন অফ ইংল্যান্ড' - নামেও সুবিদিত ছিলেন |ঔপনিবেশিক শাসন পরিকাঠামো নিয়ন্ত

ভারতীয় জাদুঘর

Image
ভারতীয় জাদুঘর কলমে : সুতপা দত্ত  জাদুঘর বা সংগ্রহালয় বলতে বোঝায় এমন একটি ভবন প্রতিষ্ঠান যেখানে পুরাতাত্ত্বিক নিদর্শন সমূহের সংগ্রহ সংরক্ষিত থাকে।  জাদুঘরে বৈজ্ঞানিক, শৈল্পিক ও ঐতিহাসিক  গুরুত্ব সম্পন্ন বস্তু সমূহ সংগ্রহ করে সংরক্ষিত করা হয়। বিশ্বের অধিকাংশ বড় জাদুঘরই প্রধান প্রধান শহর গুলিতে অবস্থিত।       ভারতীয় জাদুঘর, কলকাতা                   অতীতকালে জাদুঘর গুলি গড়ে উঠতো ধনী ব্যাক্তিদের ব্যাক্তিগত বা পারিবারিক উদ্যোগে বা কোনো প্রাতিষ্ঠানিক উদ্যোগে। এইসব জাদুঘরে সংরক্ষিত থাকতো শিল্পকর্ম,দুষ্প্রাপ্য ও আশ্চর্যজনক প্রাকৃতিক বস্তু বা পুরা বস্তু।                          ভারতীয় জাদুঘর হল ভারতের অন্যান্য জাদুঘর গুলির মধ্যে বৃহত্তম জাদুঘর, যা কলকাতায় অবস্থিত।  ১৮১৪ সালে কলকাতা যখন বৃটিশ ভারতের রাজধানী তখন এশিয়াটিক সোসাইটি অফ বেঙ্গল এই জাদুঘর প্রতিষ্ঠা করে। এই সোসাইটি ,অষ্টাদশ শতাব্দীর অন্তিম ভাগে , উইলিয়াম জোন্স  প্রাচ্য সম্বন্ধে গবেষণার উদ্দেশ্যে তৈরি করবেন বলে উদ্যোগী হন। ১৭৮৪ সালে ১৫ই জানুয়ারী তিরিশ জন ইউরোপীয় বিদগ্ধ ব্যাক্তি কলকাতা শহরের পুরাতন সুপ্রিম কোর্ট ভবনের এ